পুরান ঢাকা এবং বুড়িগঙ্গার ওপারে কেরানীগঞ্জে প্রায় ঘরে ঘরে প্লাস্টিক কারখানা গড়ে উঠেছে বলে অভিযোগ অনেক দিনের। এসব জায়গায় কতগুলো প্লাস্টিক কারখানা রয়েছে তার সঠিক পরিসংখ্যানও নেই। দাহ্য পদার্থ হিসেবে প্রায়ই অগ্নিকাণ্ডের ঘটে। তারপরও এদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। বড় অগ্নিকাণ্ডের পর এসব নিয়ে হইচই হলেও পরে আবার থেমে যায়। পরিবেশ অধিদফতরের কাছেও নির্দিষ্ট কোনও তালিকা নেই। তবে সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে মাঝে মাঝে অভিযান চালানো হয় বলে দাবি তাদের।পরিবেশবাদীরা বলছেন, দেশে গত তিন দশকে প্লাস্টিক কারখানার বিস্তার ঘটেছে। এ সময়ে দেশে বেশ কিছু নামকরা কোম্পানির কারখানা গড়ে উঠেছে। এর বাইরেও বহু কারখানা গড়ে উঠেছে। সেখানে নিরাপত্তার কোনও বিধি মানা হচ্ছে না।দেশে কী পরিমাণ প্লাস্টিকের অবৈধ কারখানা আছে জানতে চাইলে পরিবেশ অধিদফতরের উপ-পরিচালক (ঢাকা জেলা কার্যালয়) জহিরুল ইসলাম তালুকদার বলেন, আমরা নিদিষ্ট কোনও তালিকা করি না। অভিযোগ পেলেই অভিযানে যাই। নিয়মিত অভিযান হয়। তবে শিগগিরই তালিকা করা হবে। পলিথিন, প্লাস্টিক এসব কারখানার আলাদা করে তালিকা করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।পরিবেশ অধিদফতরের এক কর্মকর্তা জানান, রাজধানী ঢাকার লালবাগ, ইসলামবাগ, কামালবাগ ও নদীর ওপারে কামরাঙ্গীরচর এবং কেরানীগঞ্জে প্লাস্টিকের কারখানা গড়ে উঠেছে। যেখানে অবৈধ প্লাস্টিকের ব্যাগসহ নানা ধরনের গৃহস্থালি প্লাস্টিক পণ্য ও রাবারের খেলনা উৎপাদন হচ্ছে। এখানের অলিগলিতেও প্লাস্টিকের কারখানা গড়ে উঠেছে। অনেক ভবনে উপরের তলায় মানুষ বসবাস করলেও নিচতলায় প্লাস্টিক কারখানা গড়ে উঠেছে।রাজধানীর বর্জ্য নিয়ে বিশ্বব্যাংকের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, রাজধানীতে ২০০৫ সালে প্রতিদিন গড়ে ১৭৮ টন প্লাস্টিক বর্জ্য উৎপাদিত হতো। সেখানে ২০২০ সালের হিসাব দাঁড়িয়েছে ৬৪৬ টনে। রাজধানীসহ সারা দেশে প্রায় ১২শ’ কারখানায় নিষিদ্ধ পলিথিন তৈরি হচ্ছে। এগুলোর বেশিরভাগই পুরান ঢাকা কেন্দ্রিক। শুধু ঢাকা শহরে প্রতিদিন দুই কোটির বেশি পলিথিন ব্যাগ একবার ব্যবহার করে ফেলে দেওয়া হয়। এগুলো দ্বারা ড্রেন, নালা-নর্দমা, খাল, ডোবা ইত্যাদি ভরাট হয়ে পানির প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে, সামান্য বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতার প্রকোপ বাড়ছে।আরেক জরিপ থেকে জানা যায়, বর্তমানে দেশে প্রতিদিন ৩৫ লাখের বেশি টিস্যু ব্যাগ উৎপাদন ও বাজারজাত হচ্ছে। বাংলাদেশে প্রতিদিন যে পরিমাণ প্লাস্টিক বর্জ্য তৈরি হয়, অনেক দেশে এক মাসে সে পরিমাণ প্লাস্টিক বর্জ্য হয় না। পলিথিন ও প্লাস্টিক যে পরিবেশের জন্য কতটা ক্ষতিকর, তা এখানকার বেশিরভাগ মানুষই জানেন না। বাংলাদেশের জলে-স্থলে বর্তমানে ৬৫ লাখ টন প্লাস্টিক বর্জ্য জমা হয়েছে। প্রতিদিন এর সঙ্গে চার থেকে সাড়ে চার হাজার টন করে যোগ হচ্ছে। এর ১৭ শতাংশই প্লাস্টিক জাতীয়। এসব বর্জ্যর অর্ধেকই সরাসরি পানিতে বা নিচু ভূমিতে ফেলা হয়। বাংলাদেশে যেখানে জৈব বর্জ্য বৃদ্ধির হার ৫ দশমিক ২ শতাংশ, সেখানে প্লাস্টিক বর্জ্যের বৃদ্ধির হার সাড়ে ৭ শতাংশ। দেশের ৬১ শতাংশ মানুষ পলিথিন ব্যাগ ব্যবহার করছে। সায়েন্স অব দ্য টোটাল এনভায়রনমেন্ট জার্নালে গত বছরের নভেম্বরে প্রকাশিত এক গবেষণায় বলা হয়, দেশের পলিথিন ও প্লাস্টিক বর্জ্যের ৮৭ শতাংশই পরিবেশবান্ধব সঠিক ব্যবস্থাপনায় নির্মূল করা হচ্ছে না।অভিযানের বিষয়ে জানতে চাইলে পরিবেশ অধিদফতরের উপ-পরিচালক (বর্জ্য ও রাসায়নিক পদার্থ ব্যবস্থাপনা) আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, আমরা মাসে কমপক্ষে তিন থেকে চারটা অভিযান চালাই। একদিকে আমরা উচ্ছেদ করি। আবার অন্য জায়গায় তা গড়ে ওঠে। পুরনো ঢাকায় এসব নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে উঠেছে। কিছুটা রাস্তাঘাটের কারণেও অভিযান করা যায় না অনেক সময়। আবার বাড়ির ভেতরে গোডাউন করে রাখে, যা বাইরে থেকে দেখে বোঝার উপায় থাকে না। আগুন লাগলে তখন জানা যায় সেখানে গোডাউন ছিল।
তিনি বলেন, প্রতি মাসে আমরা অভিযোগের ভিত্তিতে তালিকা করে অভিযানে যাই। তবে এখন কী পরিমাণ কারখানা আছে তা সুনির্দিষ্ট করে বলা সম্ভব নয়।