পাহাড়ে কৃষকের সফলতা
1 min readপার্বত্য চট্টগ্রামের পরিত্যক্ত পাহাড়ে মিশ্র ফলজ বাগান করে সফলতার মুখ দেখেছে পাহাড়ের প্রায় ৫ হাজার কৃষক। এ বছর এ মিশ্র ফল বাগান থেকে আমসহ বিভিন্ন ফল বিক্রি করে কৃষকরা অনেক লাভবান হয়েছে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধানে মিশ্র ফলচাষ প্রকল্পের আওতায় তিন পার্বত্য জেলার পরিত্যক্ত পাহাড়ে মিশ্র ফল বাগান করে পাহাড়ের ৫ হাজার কৃষক সফল হয়েছে বলে জানিয়েছেন পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব ও পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান নব বিক্রম কিশোর ত্রিপুরা।
পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান নব বিক্রম কিশোর ত্রিপুরা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রত্যন্ত এলাকায় পরিত্যক্ত পাহাড়গুলোকে মিশ্র ফল চাষ প্রকল্পের আওতায় আনতে ২০১৫ সালে প্রায় ৬৩ কোটি ৫০লক্ষ টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প নেয়া হয়। এ প্রকল্পের আওতায় তিন পার্বত্য জেলায় প্রায় ৫ হাজার ফলের বাগান করা হয়। তার মধ্যে রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলায় ১৫১০টি, খাগড়াছড়িতে ১৮২৫টি এবং বান্দরবান পার্বত্য জেলায় ১৬৪৫টি বাগান করা হয়।
পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান নব বিক্রম কিশোর ত্রিপুরা জানান, ২০১৩ সালে আমি পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিবের দায়িত্ব পাালনকালীন সময়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেবে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালনকালে পরিকল্পনা কমিশন অনুমোদিত বোর্ডের চলমান ১৫টি প্রকল্পের ১টি ছাড়া বাকি সবই আমার দায়িত্ব পালনকালে অনুমোদিত ও বাস্তবায়িত হয়েছে। তার মধ্যে জনকল্যাণ মূলক গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প ছিলো পাহাড়ে মিশ্র ফলজ বাগান প্রকল্প।
তিনি জানান, এ প্রকল্পের আওতায় তিন পার্বত্য জেলার প্রায় ৫ হাজার কৃষকদের মিশ্র ফলের বাগান করতে তাদের সাথে সরাসরি আলাপ করে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে বিভিন্ন ধরনের সহায়তা প্রদান করা হয়।
১.৫ একর আয়তনের বাগানের কৃষককে আম, লিচু, মাল্টা, কুল, জলপাই, আমলকী, কাজুবাদাম, জাম্বুরা, মিস্টি তেঁতুল, পেপে, আনারস, নিম, হরিতকি, বয়রা, সাজনা, লেবু , লটকন ও কলম্বো লেবুর চারা প্রত্যেক কৃষককে ১৬৭০টি চারাকলম ও ০.৭৫ একর বাগানের কৃষককে ৮৩৫টি করে চারা-কলম দেওয়া হয়।
এছাড়া কৃষকদের উদ্যান উন্নয়ন, প্রক্রিয়াজাতকরণ ও ব্যবস্থাপনা বিষয়ে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থার পাশাপাশি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে পানির উৎস তৈরী করে সেখানে সেচেঁর সুবিধা সৃষ্টি করা হয় এবং কৃষকদের মিশ্র বাগান সফল করতে সেখানে সিলভামিক্স-ফোর্ট সার, নেপসেক স্প্রেয়ার, সিকেচার, হাসুয়া ও কোদাল প্রদান করা হয়। মিশ্র ফল বাগানের পাশাপাশি কৃষকরা সেখানে বিভিন্ন প্রজাতির সবজির চাষাবাদ করে লাভবান হয়।
পার্বত্য চট্টগ্রাম কৃষি ক্ষেত্রে অনেক সম্ভাবনাময় অঞ্চল হিসেবে উল্লেখ করে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান নব বিক্রম কিশোর ত্রিপুরা বলেন, বর্তমান সরকার কৃষিকে গুরুত্ব দিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামে ব্যাপক সহায়তা করে যাচ্ছে। সকলে সম্মিলিতভাবে সরকারের দেয়া সহায়তাকে কাজে লাগাতে পারলে পার্বত্য চট্টগ্রাম কৃষি ক্ষেত্রে বিপ্লব ঘটাবে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের সহায়তায় গড়ে উঠা মিশ্র ফল বাগানের ৫ হাজার কৃষক এখন সফলতার মুখ দেখছে বলে জানিয়েছেন পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের মিশ্র ফল চাষ প্রকল্পের সহকারী প্রকল্প পরিচালক মোঃ কামরুজ্জামান। এবছর এ মিশ্র ফল বাগান থেকে আমসহ বিভিন্ন রকমের ফল বিক্রি করে কৃষকরা অনেক লাভবান হয়েছে বলে জানান তিনি।
তিনি জানান, প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী ন্যাড়া পাহাড়কে সবুজ বৃক্ষে সুশোভিত করার প্রত্যয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের মাধ্যমে তিন পার্বত্য অঞ্চলের প্রায় ৫ হাজার চাষিকে আমসহ মিশ্র ফল বাগানের মাধ্যমে স্বাবলম্বী করে তোলার প্রক্রিয়া অনেকটাই সফল হয়েছে। মিশ্র ফল বাগান করে পাহাড়ের কৃষক এখন স্বাবলম্বী বলে জানিয়েছেন এ কর্মকর্তা। ভবিষ্যতে ও পার্বত্য চট্টগ্রামের পরিত্যক্ত পাহাড়ে মিশ্র ফলজ বাগানসহ কৃষি নির্ভর যেকোন উদ্যোগ নিতে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে প্রকল্প নেয়া হবে বলে জানান তিনি।
কৃষি বিভাগের পাশাপাশি তিন পার্বত্য জেলায় পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে মিশ্র ফলজ বাগানের মাধ্যমে ৫ হাজার কৃষকের সফলতার ভূয়সী প্রশংসা করেছেন রাঙ্গামাটি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষ্ণ প্রসাদ মল্লিক।
তিনি বলেন, কৃষি বিভাগের পাশাপাশি পাহাড়ের সম্ভাবনাময় কৃষিকে সমৃদ্ধ করতে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে যেসব উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে তার সফলতায় কৃষকরা স্বাবলম্বী হওয়ার পাশাপাশি আমরা আরো একধাপ কৃষি ক্ষেত্রে এগিয়ে গেলাম। তিনি পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়নবোর্ডের মতো অন্যান্য সরকারী বিভিন্ন উন্নয়ন সংস্থাকে কৃষিনির্ভর প্রকল্প গ্রহণের আহবান জানান।
পরিত্যক্ত পাহাড়ে মিশ্র বাগানের সফলতায় খুশি পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রায় ৫ হাজার কৃষক। এ ধারা অব্যাহত রেখে নতুন নতুন পরিকল্পনার মাধ্যমে পাহাড়ের অব্যবহৃত কৃষি জমিকে কাজে লাগাতে পারলে পার্বত্য চট্টগ্রাম কৃষিক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আশা সচেতন মহলের।
সূত্র : বাসস