November 23, 2024

ফরচুন নিউজ ২৪

এখনো চিহ্নিত হয়নি বিএম ডিপোর অক্ষত কনটেইনার, বিপাকে রপ্তানিকারকরা

1 min read

প্রায় ১০ দিন পেরিয়ে গেলেও সীতাকুণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত বিএম কনটেইনার ডিপোতে এখনো চিহ্নিত করা হয়নি রপ্তানি পণ্যবাহী অক্ষত কনটেইনার। ফলে ডিপোতে জাহাজীকরণের জন্য পাঠানো কী পরিমাণ পণ্য রপ্তানিযোগ্য আছে, রপ্তানির জন্য প্রস্তুত ছিল কত কনটেইনার পণ্য বা আগুনে কী পরিমাণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সে বিষয়ে এখনো নিশ্চিত নন রপ্তানিকারকরা। এতে করে বিপাকে পড়েছে প্রায় দুই শতাধিক রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান।

এদিকে বিদেশি ক্রেতারা তাদের পণ্যের জন্য চাপ দিচ্ছে বলে জানায় প্রতিষ্ঠানগুলো। এ নিয়ে সবচেয়ে বেশি দুশ্চিন্তায় আছে দেশের রপ্তানি আয়ের অন্যতম খাত

বিকডার হিসাব মতে, সাধারণত প্রতি টিইইউএস কনটেইনারে কমবেশি ৫০ লাখ টাকার পণ্য থাকে। তবে কী পরিমাণ রপ্তানি পণ্য ভর্তি কনটেইনার এখনো অক্ষত রয়েছে তার তথ্য বিকডার কাছেও নেই।

বুধবার বিকেলে সংগঠনটির সচিব রুহুল আমিন সিকদার বলেন, আগুনের ঘটনায় বেশ কয়েকটি তদন্ত কমিটি কাজ করছে। যে কারণে আমরা তথ্য চাইলেও তাৎক্ষণিকভাবে পাচ্ছি না।

সন্ধ্যায় এই গ্রুপের পরিচালক এম মহিউদ্দিন চৌধুরী  বলেন আমাদের পোশাক শিপমেন্ট হওয়ার আগেই। আগুন নিভলেও এখনো তদন্ত টিম কাজ করছে। আসলে আমার পণ্যগুলোর কী অবস্থা সে সম্পর্কে এখনো ওয়াকিবহাল না। আমাদের কোনো পণ্য অক্ষত রয়েছে কিনা তাও নিশ্চিত হতে পারিনি।

তিনি বলেন, এরই মধ্যে বায়াররা (বিদেশি ক্রেতা) তাদের পণ্য পাঠানোর জন্য চাপ দিচ্ছেন। এখন বিএম ডিপোতে কী পরিমাণ পোশাক পুড়েছে সেটা নিশ্চিত না হওয়ায় পরবর্তী পদক্ষেপও নিতে পারছি না।

এর আগে বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতিকে (বিজিএমইএ) দেওয়া তালিকায় ক্লিপটন গ্রুপের তিন প্রতিষ্ঠানের ২ লাখ ৯৮ হাজার ১৯০ ডলারের পণ্য ছিল বলে দাবি করা হয়।

বিজিএমইএ জানিয়েছে, ডিপোর আগুনে ১৮১ প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৪৩৬ কোটি টাকার পণ্যের ক্ষতি হয়েছে। তবে এ বিষয়েও।

এদিকে ক্ষতির বিষয় জানিয়ে বুধবার বিকেল পর্যন্ত মোট ১৯টির মতো সীতাকুণ্ড থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) হয়েছে। এর মধ্যে দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পপ্রতিষ্ঠান প্রাণ-আরএফএল গ্রুপও একটি জিডি করে। যাতে উল্লেখ করা হয়, অগ্নিকাণ্ডের আগে প্রাণ-আরএফএল এর ৩৫ লাখ ১১ হাজার ৭৩৪ ডলারের পণ্য পাঠানো হয়েছিল বিএম ডিপোতে। ২ লাখ ১৯ হাজার ২০৪ কার্টনে এসব পণ্য পাঠানো হয়। যা হস্তান্তর করা হয় ডিপো কর্তৃপক্ষকে।

সীতাকুণ্ড মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সুমন বণিক বলেন, আমার হাতে গাড়ির মালিকদের তিনটি জিডি রয়েছে। আর ১৬টি জিডি রয়েছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের। সব মিলিয়ে মোট ১৯টি জিডি আছে। এগুলো তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, জিডি করা কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে মেট্রো নিটিং অ্যান্ড ডাইং তাদের ক্ষতির পরিমাণ দেখিয়েছে ৩ লাখ ১২ হাজার ৪৫৮ ডলার। এপেক্স লিংগারী লিমিটেড তাদের জিডিতে ১ লাখ ৮৯ হাজার ৬৬৮ ডলার ক্ষতির পরিমাণ দেখিয়েছে। আবার এপেক্স টেক্সটাইল তাদের জিডিতে ৪২ হাজার ৪১১ দশমিক ৮৯ মার্কিন ডলার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে উল্লেখ করেছে।

এ বিষয়ে কথা হলে বিজিএমইএ’র সহ-সভাপতি রকিবুল আলম চৌধুরী জাগো নিউজকে বলেন, ডিপোতে রপ্তানিযোগ্য কী পরিমাণ পণ্য অক্ষত রয়েছে এ নিয়ে এখনো আমাদের কোনো তথ্য দেওয়া হয়নি। তবে যে পণ্যগুলো অক্ষত রয়েছে সেগুলো দ্রুত শিপমেন্টের পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য বন্দর, কাস্টমসসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করেছি।

এর আগে গত রোববার তিনি জানিয়েছিলেন, বিজিএমইএ’র পক্ষ থেকে সার্কুলার জারির পর ১৪১টি প্রতিষ্ঠান তাদের ক্ষতির পরিমাণ জানায়। এসব প্রতিষ্ঠানের সব মিলিয়ে ৪৭ দশমিক ৪৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের (বাংলাদেশি টাকায় ৪৩৬ কোটি টাকার বেশি) মালামালের ক্ষতি হয়।

বিজিএমইএ’র সহ-সভাপতি বলেন, ফ্রেইট ফরোয়ার্ডাররা কী পরিমাণ পণ্য রিসিভ করেছে, আর কতটুকু জাহাজীকরণ করেছে, সে তথ্য মেলানোর পর চূড়ান্ত ক্ষতি নির্ধারণ সম্ভব হবে। বর্তমানে যে দাবি করা হচ্ছে, চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে তাতে কমবেশি হতে পারে।

বিজিএমইএ সূত্রে জানা গেছে, আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত ১৪১ প্রতিষ্ঠানের পোশাক যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, চীন, অস্ট্রেলিয়া, জার্মানি, সুইডেন, নিউজিল্যান্ড, নেদারল্যান্ড ও ডেনমার্কে যাওয়ার কথা ছিল। এর মধ্যে বেশির ভাগ পণ্যের ক্রেতা সুইডেনভিত্তিক বিশ্বখ্যাত ব্রান্ড এইচঅ্যান্ডএম।

এছাড়া টার্গেট, ওয়ালমার্ট, টপ গ্রেড, গ্যাস্টন, ওলওর্থস, ফিলিপস ভ্যান হিউসেন, পিভিএইচ, এমবিএইচ, চ্যাপ্টার ওয়ান স্পোর্টস ওয়্যার, সিএন্ডএ বায়িং, নিউ ফ্রন্টেয়ার, রচি ট্রেডার্স ইনকরপো ও বিএএসএসের কেনা পণ্যও পুড়েছে আগুনে।

ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে চট্টগ্রামের সি-ব্লু অ্যান্ড সি টেক্সটাইল লিমিটেডের ১৬ লাখ ২৫ হাজার ২৫৫ ডলারের, অ্যারো ফেব্রিক্স প্রাইভেট লিমিটেডের ৩ লাখ ২০ হাজার ৫০০ ডলার, সুজি ফ্যাশনস লিমিটেডের ৪৪ হাজার ২২৬ ডলার, এভালন ফ্যাশন লিমিটেডের ২ লাখ ১৪ হাজার ৪২৯ ডলার, স্যানটেক্স অ্যাপারেলস লিমিটেডের ১ লাখ ৩৯৪ ডলার, ডিভাইন ইনটিমেটস লিমিটেডের ৩১ লাখ ৩৫ হাজার ৪৯৩ ডলার, ডিভাইন ডিজাইন লিমিটেডের ১ লাখ ৫৫ হাজার ১৪৪ ডলার, বিলামি টেক্সটাইল লিমিটেডের ২ লাখ ৩৮ হাজার ৫ ডলার, প্যাসিফিক জিনস লিমিটেডের ১৩ লাখ ডলার, কেডিএস অ্যাপারেলস লিমিটেডের ১ লাখ ৫২ হাজার ৪৭৮ এবং কেডিএস গার্মেন্টস লিমিটেডের ২ লাখ ৩৬ হাজার ৭ ডলারের পোশাক ছিল।

এছাড়া ঢাকাসহ দেশের অন্য জেলার পোশাক রপ্তানিকারীদের মধ্যে স্টার্লিং ডেনিমস লিমিটেডের ১২ লাখ ৯ হাজার ১৭২ ডলার, হপ ইক (বাংলাদেশ) লিমিটেডের ১৫ লাখ ৯৯ হাজার ৭৩১ ডলার, ক্রিসেন্ট ফ্যাশন অ্যান্ড ডিজাইড লিমিটেডের ৯ লাখ ২ হাজার ১৫৭ ডলার, পাইওনিয়ার নিটওয়্যার (বিডি) লিমিটেডের ১০ লাখ ৮৯ হাজার ১৫৭ ডলার, কলম্বিয়া অ্যাপারেলস লিমিটেডের ১২ লাখ ১৫ হাজার ৭২৩ ডলার, কলম্বিয়া গার্মেন্টস লিমিটেডের ১২ লাখ ৯৫ হাজার ৫১৭ ডলার, এসএম নিটওয়্যারস লিমিটেডের ১১ লাখ ৬৭ হাজার ৩৬৭ ডলারের পোশাক ছিল।

অপরদিকে শিন শিন অ্যাপারেলস, কেএ ডিজাইন, জেএফকে ফ্যাশন, একেএইচ নিটিং অ্যান্ড ডাইং, ভার্সাটাইল টেক্সটাইল, রিও ফ্যাশন, ভিশন অ্যাপারেলস, ইমপ্রেস-নিটেক্স কম্পোজিট টেক্সটাইল, আমান টেক্সটাইল, আয়েশা ক্লথিং, আসওয়াদ কম্পোজিট, আরকে নিট, টিআরজেড, রেমি হোল্ডিংস, টারাসিমা অ্যাপারেলস, কেসি বটম অ্যান্ড শার্টস, ভ্যানগার্ড গার্মেন্টস, মাশিয়াতা সুয়েটাস, চৈতি কম্পোজিট, নিউওয়েজ অ্যাপারেলস, কেইলক নিউওয়েজ বাংলাদেশ, আরাবি ফ্যাশন, দিগন্ত সুয়েটার্স, তাকওয়া ফেব্রিক্স, ফাউন্টেন গার্মেন্টস, ম্যাগপি কম্পোজিট, পিমকি অ্যাপারেলস, অনন্ত অ্যাপারেলস, একেএইচ ইকো অ্যাপারেলস, একেএইচ ফ্যাশনস, নিট এশিয়া লিমিটেড, অরুনিমা স্পোর্টস ওয়্যার, টার্গেট ফাইন নিট, হেসং কোরিয়া লিমিটেড, সেটার্ন টেক্সটাইলস, ক্রিসেন্ট ফ্যাশনেরও পণ্য রয়েছে বিএম কনটেইনার ডিপোতে।

jagonews24

এ বিষয়ে কথা হলে কাস্টমসের সহকারী কমিশনার উত্তম চাকমা  বলেন, বেসরকারি কনটেইনার ডিপোর কার্যক্রম বন্দরের কার্যক্রমের মতোই। এখানে রপ্তানিকারকদের কাছ থেকে পণ্য গ্রহণ করে বন্দর। এসাইকুডা ওয়ার্ল্ড সফটওয়্যারে রপ্তানি দলিল উপস্থাপন করলেই আমরা রপ্তানি পণ্য সম্পর্কে জ্ঞাত হই।

তিনি আরও বলেন কী পরিমাণ পণ্য ঢুকেছিল, তার তথ্য বন্দরের কাছে থাকতে পারে। কারণ বিএম ডিপোর সার্ভার পুড়ে গেছে। তাদের কাছেও ব্যাকআপ সার্ভার থাকার কথা। তা না হলে বন্দর কর্তৃপক্ষের কাছে নিশ্চয়ই ব্যাকআপ সার্ভার রয়েছে। তারাই মূল তথ্যটি দিতে পারবে।

এদিকে অক্ষত কনটেইনারের বিষয়ে জানতে বেশ কয়েকবার ফোন দিলেও রিসিভ করেননি চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব ওমর ফারুক। পরে বেশ কয়েকবার ম্যাসেজ দিলেও কোনো সাড়া মেলেনি।

About The Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *