April 18, 2024

ফরচুন নিউজ ২৪

আধুনিক ঢাকার বুকেও টিকে আছে ঘোড়ার গাড়ি

1 min read

পুরান ঢাকার সদরঘাটে কলেজিয়েট স্কুলের সামনে থেকে গুলিস্তান গোলাপশাহ মাজার পর্যন্ত অন্যান্য গাড়ির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এখনও চলছে নবাবী আমলের প্রায় ২০০ বছরের ঐতিহ্যবাহী ঘোড়ার গাড়ি। সূর্যোদয়ের পর পর মানুষের হাঁকডাক বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ঘোড়ার টকাটক টকাটক শব্দে চলতে থাকে পেশিশক্তির এই বাহন। স্থানীয়দের কাছে ‘টমটম’ নামে পরিচিত এই ঘোড়ার গাড়ি। ঢাকায় প্রচলন শুরুর সময়ে এটি ‘ঠিকা গাড়ি’ নামে পরিচিত ছিল। আগে ঘোড়ার গাড়ি নিত্যদিনের সঙ্গী হলেও আধুনিকতার ভিড়ে ঘোড়ার গাড়ির সঙ্গে কমে গেছে এর যাত্রীও।

পুরান ঢাকার স্থানীয় এবং কোচয়ানদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে এই ঘোড়ার গাড়ি। একেকটি গাড়ি প্রতিদিন সর্বোচ্চ ছয়বার সদরঘাট-গুলিস্তান রুটে যাওয়া-আসা করতে পারে। একটি টম টম গাড়িতে সর্বোচ্চ ১৫ জন যাত্রী বসতে পারে। ভাড়া জনপ্রতি ৩০ টাকা করে নেওয়া হয়। তবে বিশেষ দিনগুলোতে প্রত্যেক যাত্রীর ভাড়া হয়ে যায় ৫০ টাকা। বর্তমানে সদরঘাট-গুলিস্তান রুটে ১৫-২০টি ঘোড়ার গাড়ি চলে।

আরও জানা যায়, প্রতিটি টমটমে একজন করে কোচয়ান-হেলপার থাকে। কোচয়ানরা ঘোড়াকে নিয়ন্ত্রণ করেন। হেল্পাররা মালামালসহ যাত্রীদের গাড়িতে উঠতে সহায়তা করেন। কোচয়ানদের পারিশ্রমিক ও ঘোড়ার খাদ্য খরচ বাদে প্রতিদিন ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা আয় হয় ঘোড়ার গাড়ির মালিকদের।

সদরঘাটের ঘোড়ার গাড়ির কোচয়ান জমির মোল্লা বলেন, দীর্ঘদিন থেকে গুলিস্তান রুটে টমটম চালাই। এই গাড়ি ঢাকাইয়াদের ঐতিহ্য। আগে নিত্যদিন যাতায়াত করলেও এখন মানুষ শখেরবশে বেশি ওঠে। এই রুট ছাড়াও মানুষের বিয়ে ও বিভিন্ন উৎসব অনুষ্ঠানে টমটম ভাড়া নেওয়া হয়। বিয়ের অনুষ্ঠানের জন্য নেওয়া হলে ভাড়া দূরত্ব অনুযায়ী ৫ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত নিয়ে থাকি।

তিনি আরও জানান, আগে রাস্তায় ৫০টির মতো ঘোড়ার গাড়ি ছিল। রিকশা-মোটরযান বেড়ে যাওয়ায় এখন মানুষ মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। আগে দিনে অনেক ট্রিপ দিতে পারতাম। জ্যাম বেড়ে যাওয়ায় তা সম্ভব হয় না। তবে ছুটির দিনগুলোতে রাস্তা অনেকটা ফাঁকা থাকে দিনে ৮-৯ বার আসা-যাওয়া করা যায়।

টমটমের মালিক সালাহ উদ্দীন বলেন, ‘ঘোড়ার গাড়ি আমাগো আদি ঢাকাইয়াবাসীর ঐতিহ্য। আগের মতো ঘোড়া ঢাকায় নেই। এখন রাস্তায় যানবাহন বেড়ে যাওয়ায় গাড়ি চালানোটাই কষ্ট। অন্যদিকে ঘোড়ার সঠিক পরিচর্যা করা সম্ভব হচ্ছে না। ভুসি, ঘাস অন্যান্য খাদ্য সামগ্রীর দাম বাড়ায় খরচ অনেক বেড়েছে। এখন আর ঘোড়াকে তিনবেলা খাবার দেওয়া সম্ভব হয় না।’

অভিযোগ করে এই টমটমের মালিক বলেন, প্রায় ঘোড়া অসুস্থ হয়ে যায়। কেন্দ্রীয় পশু হাসপাতালে গেলে ভালো চিকিৎসা পাওয়া যায় না। তারা শুধু ওষুধ লিখে ছেড়ে দেন, অন্য কোনো পরিচর্যার ব্যবস্থা নেই।

অন্যদিকে ঘোড়ার গাড়িতে আগের মতো যাত্রীদের ভিড়ও নেই। অধিকাংশ যাত্রী শখ বা আভিজাত্যের স্বাদ নিতে গাড়িতে ওঠেন।

আরেক যাত্রী অপূর্ব চৌধুরী বলেন, ঘোড়ার গাড়িতে ওঠার শখ অনেকদিন আগে থেকেই ছিল। তবে ওঠা হয়নি। আজ আমি ও আমার বান্ধবী আহসান মঞ্জিলে ঘুরতে এসেছি। গুলিস্তান থেকে সদরঘাট পর্যন্ত ঘোড়ার গাড়িতে এসেছি। কোনো ভিড় বা হইচই নেই। ভাড়া একটু বেশি হলেও শান্তিপূর্ণ ভ্রমণ বা যাতায়াতের জন্য ঘোড়ার গাড়ি সেরা।

একসময়ে শুধু রাজা-বাদশাহ, অভিজাত শ্রেণি ঘোড়ার গাড়ি ব্যবহার করলেও পরে সাধারণ মানুষ এর ব্যবহার শুরু করে। ফলে রাজকীয় বাহনটি দেশের ইতিহাস ঐতিহ্যের সঙ্গে দুইশত বছর পার করেছে। গুলিস্তান-সদরঘাট ছাড়াও রাজধানী ঢাকার ফুলবাড়িয়া, গুলিস্তান, গোলাপশাহ মাজার, বঙ্গবাজার, বকশীবাজার ও কেরানীগঞ্জ এলাকায় ১৫-২০টি ঘোড়া গাড়ি চলাচল করে।

About The Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *